রাঙামাটির রঙরাং - All Technology

This is a Technology Blog site.If you have a desire to learn, but a repository of knowledge for you to this page.Now that the technology will continue to become more self-reliant development of the last corner.I will attempt to present something new for everyone.

Recent Posts

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Friday, September 11, 2015

রাঙামাটির রঙরাং

জুরাছড়ি থেকে ফিরতেই বেলা গেল পড়ে। পড়ন্ত বিকেলে নৌকার ছাদে বসে হাওয়া গায়ে মেখে পৌঁছলাম বালুখালী নামক জায়গায়। বাকি আছে আর মাত্র এক প্রহর বেলা। নৌকা থামিয়ে কাপ্তাই লেকে দাপাদাপি করার ফাঁকে চোখে পড়ল অদূরের এক পাহাড়।
ব্যস, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম জলদি। রাঙামাটিতে এসে শুধু অথই জলরাশির ওপর ভাসলেই চলবে না, পাহাড়েও উঠতে হবে। সিদ্ধান্তমতো নৌকা থামল সুবলং ঘাটে। ভেজা কাপড় না বদলিয়েই নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। অনুমতির জন্য সেনাক্যাম্পে গেলাম। কর্তব্যরত সেনাসদস্যদের কোনো আপত্তি নেই দেখে উৎসাহ বেড়ে গেল বহুগুণে।
এর আগে খুব সকালে শুরু হয় আমাদের নৌকাভ্রমণ রাঙামাটি শহরের সমতা ঘাট থেকে। রিজার্ভ নৌকায় কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলীর বুকে ভেসে বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার কোথায় কী আছে, দেখার মস্ত এক পরিকল্পনা নিয়ে বের হয়েছিলাম আমরা। দলে আমিসহ পাঁচজন।
যা হোক, ওপরে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলাম খানিকটা। প্রথমে মনে হয়েছিল খুব সহজেই ওঠা যাবে এ পাহাড়চূড়ায়। কিন্তু এর ওঠার পথ বেশ খাড়া। ভেজা শরীরেও ঘাম ঝরতে লাগল তরতর করে। পড়ন্ত বিকেলে হ্রদ-নদী ছুঁয়ে আসা বাতাসের প্রবাহ পাহাড় বেয়ে ওঠার কাজটিকে কিছুটা হলেও সহজ করে দিল। বিশ মিনিটের মতো ট্রেকিং করে উঠে পড়লাম রঙরাং পাহাড়চূড়ায়। পরের দিন ফুরামন অভিযানের বাড়তি একটা প্রস্তুতি হয়ে গেল দলের অনভিজ্ঞ সদস্যদের। খাড়া এ পাহাড়ে উঠতে অনেকের কষ্ট হলেও সেটি চাপা পড়ে গেল চারপাশের সৌন্দর্যের হাতছানিতে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মোহনীয় কর্ণফুলী। দুই পাহাড়ের মাঝে কর্ণফুলীর এ সৌন্দর্য না দেখলে যেন কিছুই দেখা হতো না! পূর্ব দিকে ছোট্ট দ্বীপের ওপর মাথা জাগিয়ে নিশ্বাস ফেলছে সুবলং বাজার। দূরের ঢেউখেলানো পাহাড় সারি অন্য রকম শৈল্পিক রূপ ধারণ করেছে এখানে। প্রশস্ত কাপ্তাই লেকের বুকে ছোট-বড় দ্বীপপুঞ্জ। রঙরাং চূড়ায় না উঠলে রাঙামাটির এমন সৌন্দর্য হয়তো থেকে যেত অজানা। রাঙামাটিতে এসে কেবল কাপ্তাই লেক আর কর্ণফুলী নদীর বুকে ভ্রমণ করেই এখানকার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না, যতক্ষণ না কেউ রঙরাং কিংবা ফুরামন চূড়ায় উঠবেন।
সুবলং বাজার একটা ট্রানজিট পয়েন্ট। সকল নৌকা ও লঞ্চের ছাড়পত্র লাগে এখানকার সেনাক্যাম্পের। কাসালং আর কর্ণফুলীর সংযোগ এলাকাও এটি। সুবলং থেকে দক্ষিণে কাপ্তাই লেকের একটা অংশ গিয়ে মিশেছে জুরাছড়ি পর্যন্ত। আর উত্তর-পূর্বে মারিশ্যা-লংগদু হয়ে আরও বিস্তৃত এ লেকের সীমানা। পূর্ব দিক থেকে বরকলের পাহাড়সারি চিরে এসেছে কর্ণফুলীর স্রোত। আর বহতা কাসালং কাপ্তাই লেকের বিস্তীর্ণ জলরাশির সঙ্গে গড়াতে গড়াতে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এই সুবলং এলাকায়। চারপাশের এমন সব সৌন্দর্যের উপাদান চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, যদি রঙরাং চূড়ায় উঠে উৎসুক দুচোখ মেলতে পারেন!
একসময় নাকি সুবলং এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়ে এবং আশপাশের পাহাড়ে রঙরাং নামক এক প্রজাতির পাখির বসবাস ছিল। পানি পথে মানুষের যোগাযোগ ক্রমেই বাড়ার ফলে রঙরাং পাখিরা আর নিরাপদ মনে করল না এই এলাকাকে। অনেকটা ধনেশ পাখির মতো দেখতে এসব পাখি আর দেখা যায় না সুবলং এলাকায়। তবে রাঙামাটির সাংবাদিক ছন্দসেন চাকমা জানালেন, পাহাড়ের গহিনে গেলে এসব পাখির দেখা মেলে কখনো কখনো। দেখা যাক আর না যাক, পাহাড়ের আদিবাসীরা এখনো এ পাহাড়কে রঙরাং নামেই চেনেন।
রঙরাং পাহাড়ের পাদদেশে সেনাক্যাম্প, আর চূড়ায় পুলিশের। পাহাড়ের ওপরে আছে টিঅ্যান্ডটির টাওয়ার। সেটির নিরাপত্তা বিধানের জন্য এখানে পুলিশ সদস্যদের থাকতে হয়। তাই অনেকে এখন এটিকে টিঅ্যান্ডটি পাহাড় বলে থাকেন। এখানকার পুলিশ সদস্যরা বেশ আতিথেয়তা দেখালেন। এক পুলিশ সদস্য মজা করে বললেন, ‘এখানে আম আর কাঁঠাল ফ্রি, তবে পানি চাইবেন না।’ খাবার পানি সংগ্রহ করা এখানে কঠিন কাজ বুঝতে বাকি রইল না।
রাঙামাটিতে আসা পর্যটকেরা রঙরাং পাহাড়ের নাম হয়তো কমই শুনে থাকেন। নৌকার মাঝিরা সুবলং ঝরনা ঘুরিয়েই শেষ করেন তাঁদের পালা। এমনকি অনেক পর্যটক সুবলং বাজারটাও ঘুরে যেতে পারেন না নিজেদের কাছে তথ্য না থাকার কারণে। অথচ এটি সুবলং ঝরনার খুব কাছাকাছি একটি পাহাড়। আর সুবলং সেনাক্যাম্পের পাশ দিয়েই উঠতে হয় রঙরাং পাহাড়ে।
যেভাবে যাবেন 
ঢাকার কলাবাগান, কমলাপুর ও ফকিরাপুল থেকে রাঙামাটিগামী যেকোনো বাসে চেপে যেতে হবে রাঙামাটি শহর। এরপর নৌকা রিজার্ভ করুন। নৌকা ভাড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। ভাড়া চুকানোর সময় প্যাকেজে সুবলং ঝরনার সঙ্গে সুবলং বাজার ও রঙরাং বা টিঅ্যান্ডটি পাহাড়ও অন্তর্ভুক্ত করুন। আর সুবলং সেনাক্যাম্পে মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। যেকোনো সময় রাঙামাটি ভ্রমণ অনন্য। তবে প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চাইলে বর্ষাকাল এবং এর পরবর্তী সময়কে বেছে নিন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages