মেঘের ওপাশে ঝরনা - All Technology

This is a Technology Blog site.If you have a desire to learn, but a repository of knowledge for you to this page.Now that the technology will continue to become more self-reliant development of the last corner.I will attempt to present something new for everyone.

Recent Posts

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Friday, September 11, 2015

মেঘের ওপাশে ঝরনা

দাঁড়িয়ে আছি দানবের জটার ওপর। দানব ডুবে গেছে নদীর পানিতে, আটকে গেছে তার জটা। শিলংয়ের এই পাহাড়টার পেছনে এমনই কাহিনি প্রচলিত। নদীতে ডুবে মরে যাওয়া দানবের জটাই নাকি আজকের এই পাহাড়। মাওট্রপ ভিউ পয়েন্ট জায়গাটার নাম। এখানে দাঁড়িয়ে দেখছি দূরে সিলেটের ভোলাগঞ্জ। সিলেটে বেড়াতে গিয়ে আগে দেখতাম ভারতের পাহাড়গুলো। এবার ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দেখা। আবারও একই আফসোস মনে, আহা রে সুন্দর সব পাহাড় ঝরনাই তো পড়েছে ভারতের মাটিতে।
সিলেট থেকে জোরে এক দৌড় দিলেই নাকি শিলং, চেরাপুঞ্জি পৌঁছে যাওয়া যায়। ঈদের ছুটিতে সেই চেষ্টাই করে দেখলাম, সঙ্গী হলো ক্যামেরা আর চারজন বন্ধু। ভিসা করা, সীমান্ত পেরোনো—এসব ঝামেলা অবশ্য করতেই হলো। ইন্টারনেট খুঁজে আগেই একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা বানিয়ে ফেলেছিলাম বন্ধু রিদওয়ানুল খায়েরের কথামতো। সিলেটের তামাবিলের ডাউকি সীমান্ত থেকে শুরু হলো মূল যাত্রা। সীমান্তের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জিপ ঠিক করা হলো শিলংয়ের দিকে, দূরত্ব মোটামুটি ৮৫ কিলোমিটার। পথে অবশ্য থামলাম দারুণ এক জায়গায়, মাওলাইনং গ্রামটার নাম। এই গ্রামে আছে গাছের শিকড়বাকড় পেঁচিয়ে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক এক সেতু। লিভিং রুট ব্রিজ বলা হয় একে।
আবার যাত্রা শুরু শিলংয়ের দিকে। যদি ভারতীয় সিনেমার ভক্ত হয়ে থাকেন, এই পথ খুব চেনা মনে হবে। নানা সিনেমায় দেখেছেন। আস্তে আস্তে ওপরে উঠছি। নীল আকাশ, সবুজ পাহাড় আর সাদা খণ্ড খণ্ড মেঘ—আশপাশের দৃশ্য বলে এটাই। তাতেই এমন বৈচিত্র্য!
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে পৌঁছে গেলাম আমরা শিলং শহরে। পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠা ঝকঝকে এক শহর শিলং। ঠান্ডা আবহাওয়া এখানে, রাত বাড়ার সঙ্গে ঠান্ডার প্রকোপও বেড়ে যায়। রাত নয়টার সময় এখানে দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১০টার পর পুরো শহরই ঘুমিয়ে যায়। সারা দিনের ধকলে আমরাও ক্লান্ত। পরদিন লম্বা ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা আমাদের।
সকালবেলা আগের রাতে ঠিক করে রাখা জিপে বের হয়ে গেলাম চেরাপুঞ্জির দিকে। এখানে আকাশ সব সময় মেঘাচ্ছন্ন, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। যেকোনো সময় বৃষ্টি হয়ে যায়, তাই ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখা ভালো। মাওসমাই গুহায় গেলাম প্রথমে। ছোট একটা গুহা, ভেতরে সুড়ঙ্গের মতো রাস্তা। এখানে পর্যটকদের চলাচলের জন্য আলোর ব্যবস্থা করা আছে। গুহা থেকে ঝরনার দিকে যাত্রা এরপর। কায়েনরেম ঝরনার একদম নিচে চলে গিয়েছিলাম আমরা। এখানেই সেই মাওট্রপ ভিউ পয়েন্ট।
এবার সেভেন সিস্টারস দেখার পালা। বিশাল এই ঝরনা দেখতে হয় আরেক পাহাড়ের ওপর থেকে। কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ের মতোই এ ঝরনার দেখা পেতেও ভাগ্যের যোগ লাগে। প্রায় ৩০ মিনিট তাকিয়ে আছি মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে। মন খারাপ করেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, তখনই আড়াল থেকে বেরিয়ে এল সে। বিশাল পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে নেমে গেছে বহুদূর।
চেরাপুঞ্জিতে ঘুরে বেড়ানোর একটা সুবিধা হলো, সব ঝরনা গাড়িতে ঘুরে দেখা যায়। পাহাড়ে ট্রেকিং করে যাওয়ার দরকার হয় না। দিনের শেষে দেখতে গেলাম নহকালিকাই ঝরনা। এই ঝরনার পানি সরাসরি ১ হাজার ১০০ ফুট নিচে এসে পড়ে। পথে কোথাও বাধা পায় না। সময়ের অভাবে এর নিচ পর্যন্ত আর যাওয়া হলো না। ফিরে এলাম শিলং শহরে। রাতে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ভিন্ন একটা মজাও হলো।
পরদিনও মেঘের দখলে। রোদ কিংবা সূর্যের দেখাই নেই। আজকে যাওয়ার কথা ওয়েস্ট খাসি হিলের দিকে। দিনটা ঝকঝকে না হলেও চারপাশে সৌন্দর্যের অভাব মনে হচ্ছে না একদম। ওয়েস্ট খাসি হিলে যাওয়ার পথটা অপূর্ব। ঢেউখেলানো পাহাড়গুলো ছেয়ে আছে বড় বড় ঘাসে। পাহাড়ের গায়ে পিচ ঢালা রাস্তা। তবে হেসেখেলে বেড়ানোর পরিকল্পনা আজ পরিণত হলো রীতিমতো অভিযানে। কারণ, গাড়িচালক পথ চেনেন না ভালোমতো। এটা এমন এলাকা যেখানে লোকজন হিন্দি, বাংলা কোনোটাই ভালোমতো বোঝে না। ভাঙা ভাঙা বাক্য আর ইশারায় সঠিক পথ খুঁজে বের করাটা বেশ কঠিন। ওয়েইনিয়া ঝরনার পথে যাচ্ছি আমরা। মাঝে থাম ঝরনার দেখা পাওয়ার কথা। একসময় গাড়ির রাস্তা শেষ হয়ে গেল। এবার হাঁটা শুরু। বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগল এবার। উঁচুনিচু বেশ কয়েকটা টিলা পেরিয়ে থাম ঝরনায় চলে এলাম। তীব্র গর্জনে সাদা ফেনা তুলে পানি পড়ছে নিচে। কী যে ভূতে পেল, ওপর থেকে নিচের দিকে নামতে শুরু করলাম। প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া ২০০ ফুটের মতো পিচ্ছিল পথ। নামা শুরু করে মনে ভর করেছে বিপদের আশঙ্কা। ফেরার উপায় নেই। পুরোটা নেমে আবার এই পথে উঠতে হলো।
সারা দিন টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় করে ঘুরছি আমরা। ছোট ছোট ঘাসে ভরা একটার পর একটা ঢেউয়ের মতো টিলা। লোকজন একেবারেই নেই বলা যায়। দূরে দূরে দু-একটা ঘর চোখে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা এভাবে হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম ওয়েইনিয়া ঝরনায়। বহমান কোনো নদীর পানি এসে কীভাবে যে সুন্দর ঝরনায় রূপ নেয়—এই পুরো ব্যাপারটা এই ওয়েইনিয়া ঝরনায় দেখা যায়। অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে এর পানি। তবে বোকামি করেছিলাম আমরা। একে তো খাবার আর পানি সঙ্গে আনা হয়নি। তার ওপর পথ না চেনায় ভেতর দিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেঁটে আসতে হয়েছে। অথচ সরাসরি ঝরনার কাছ পর্যন্ত যাওয়া যায় গাড়ি দিয়েই।
রাত ১০টারও বেশি বেজে গেল আমাদের হোটেলে পৌঁছাতে। রাতের বেলা পাহাড়ের ওপর বাতি জ্বালানো শহরগুলোর রূপ অসাধারণ। পরদিন দেশের পথে ফিরতি যাত্রা। এবার যেন একই পথ অন্য রূপে ধরা দিল। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, মেঘের কারণে এ রকম মনে হচ্ছে। একেকটা পথের রূপ একেক সময় ভিন্ন।
কীভাবে যাবেনশিলং যাওয়ার ভালো সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়। কারণ, শীতকালে কোনো ঝরনাতেই পানি থাকে না। শিলং আর চেরাপুঞ্জিতে দেখার আরও অনেক জায়গা আছে। শ্যামলী বিআরটিসির নতুন বাস সার্ভিস চালু করছে শিলং পর্যন্ত, বৃহস্পতিবার গিয়ে সোমবার ফেরত। অথবা ভেঙে যেতে চাইলে ঢাকা-সিলেট বাস। তারপর সিএনজিতে চড়ে তামাবিল বর্ডার। সেখান থেকে ছোট গাড়ি বা জিপে করে শিলং। ডাউকি থেকে শিলং জিপ ভাড়া ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ রুপি। শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি জিপ ভাড়া ৩ হাজার ২০০ রুপি। ট্যাক্সি ভাড়া জিপের চেয়ে কম। এ ছাড়া লোকাল বাস আছে। আবার কিছু টুর প্যাকেজও থাকে। চেরাপুঞ্জিতে কিছু জায়গায় দেখার সময় টিকিট করা লাগে, ক্যামেরার জন্য আলাদা টাকা (১০/২০ রুপি) ও গাড়ি পার্কিংয়ের টাকা দিতে হয়। তবে নিজের মতো ঘুরে দেখতে চাইলে জিপ বা ট্যাক্সি ভাড়া নেওয়াই ভালো। শিলং থেকে ওয়েস্ট খাসিতে গাড়িভাড়া ৪ হাজার ২০০ রুপি। ওই দিকে গাইড পাওয়া যায় না, স্থানীয় লোকদের সঙ্গে নিতে হয়। তবে তাঁদের সঙ্গে পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আগেই কথা বলে নেবেন। শিলংয়ে ব্যাংকে ডলার ভাঙাতে পারবেন বেলা দুইটা পর্যন্ত। শিলং শহরে মানি এক্সচেঞ্জ আছে মাত্র দুটি, জিএস রোডের মাথায়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages