
আমরা সবাই জানি, বেশি গরমে খুব বেশি পরিশ্রম করলে ঘামের জন্য শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) দেখা দেয়। তখন বেশি পানি পান না করলে বিপদ হতে পারে। ডায়রিয়া বা ঘন ঘন বমি হলেও একই অবস্থা হয়। স্যালাইন গ্রহণ করতে হয়। কারণ, তরল পদার্থের সঙ্গে শরীর থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি লবণও বেরিয়ে যায়। এসব লবণ ইলেকট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। এর সাহায্যে শরীরের সেলগুলোতে শক্তি সঞ্চার হয়। শরীর সচল থাকে। ইলেকট্রোলাইটের অভাব হলে কিডনি, পেশি, মস্তিষ্ক প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। শরীর আর কাজ করতে পারে না। এভাবে জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। স্যালাইন গ্রহণ করলে তরল ও লবণের অভাব পূরণ হয়। আমরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারি। ডিহাইড্রেশনের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমরা যতটা জানি, ওভারহাইড্রেশন বা অতিরিক্ত পানি গ্রহণের সমস্যা সম্পর্কে আমরা কি ততটা জানি? আমরা কি জানি যে অতিরিক্ত পরিশ্রান্ত হয়ে খুব বেশি পানি পান করলে খেলোয়াড়দের আরেক ধরনের বিপদ হতে পারে? এমনকি জীবনের ওপর হুমকিও সৃষ্টি হতে পারে? এ বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নিন।
১. ধরা যাক, খুব গরমের সময় খেলার মাঠে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুটবল বা ক্রিকেট অনুশীলন করছে। এ সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কায় কোচ বারবার তরুণ খেলোয়াড়দের পানি পান করতে বলছেন। কারণ, কোচ জানেন যে ডিহাইড্রেশন হলে পেশির সংকোচন ঘটে, তাই প্রচুর পানি ছাড়া সে ভালোভাবে খেলতে পারবে না। কিন্তু বেশি পানি যে সমস্যাও হতে পারে, সে বিষয়ে হয়তো কোচ বা খেলার মাঠে উপস্থিত অভিভাবকেরা প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেন না।
২. যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন তরুণ খেলার সময় পরিশ্রান্ত হয়ে অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের অন্তত তিনজনের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে তাঁদের অনেকে হয়তো ১০-১২ লিটার পানিও পান করে ফেলেছিলেন।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটির অ্যাথলেটিক ট্রেনিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক কেভিন মিলার বলেন, খেলতে গিয়ে ওরা এক বিরল পরিস্থিতির শিকার হয়। এ রকম অসুস্থতা শরীরচর্চা-সংশ্লিষ্ট হাইপোনেট্রিমিয়া নামে পরিচিত। একে সাধারণ অর্থে পানির বিষক্রিয়াও বলা হয়। অতিরিক্ত পানির চাপ শরীরের জন্য অনেক সময় অসহনীয় হয়ে পড়ে। শুধু ফুটবল, ক্রিকেট খেলার সময় নয়, ম্যারাথন দৌড়, স্প্রিন্ট ট্রায়াথলন প্রভৃতি ক্ষেত্রেও এ রকম হয়।
৪. খুব বেশি পানি গ্রহণের পর শরীর যদি ঘাম বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে না পারে, তাহলে হাইপোনেট্রিমিয়া হতে পারে। এর ফলে রক্তে পানির মাত্রা বেড়ে যায় এবং সোডিয়ামের তারল্য কমে এর মাত্রা কমে যায়। তখন সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য রক্তনালির চারপাশের সেলগুলো আস্রবণ (অসমোসিস) প্রক্রিয়ায় রক্ত থেকে পানি টেনে নেয়। এর ফলে সেলগুলো বেলুনের মতো ফুলতে থাকে। মস্তিষ্কে এই প্রক্রিয়া শুরু হলে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
৫. কতটা পানি দরকার, তা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শরীর জানিয়ে দিতে পারে। আমরা সবাই জানি, এর নাম তৃষ্ণা। প্রয়োজন হলেই তৃষ্ণা পায়। তৃষ্ণা পাওয়ার আগে বা তৃষ্ণা মিটে যাওয়ার পর পানি পান করা উচিত নয়। এই সাধারণ নিয়ম মেনে চললে ডিহাইড্রেশন বা ওভারহাইড্রেশনের ভয় থাকে না।
No comments:
Post a Comment